এক ঘরে পাঁচ মহিলা, ১৭ জন পুরুষ অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত, পুলিশের অভিযানে আটক

 


দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছিল এক অবৈধ দেহ ব্যবসা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এক প্রভাবশালী নেতার শ্যালিকার ছত্রছায়ায় এ ব্যবসা এতদিন নির্বিঘ্নে চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে মধুচক্রের পর্দাফাঁস হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় এক গৃহবধূকে কটুক্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বচসা শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে মধুচক্র ভাঙার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


দেহ ব্যবসার গোপন আস্তানা


বজবজ থানার অন্তর্গত নিশ্চিন্তপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রবীন্দ্র কানন শিশু উদ্যানের পাশেই চলছিল এই দেহ ব্যবসার কারবার। এলাকাবাসীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এখানে বাইরের লোকজন আসত। রাত হলেই এলাকাটি হয়ে উঠত সন্দেহজনক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল। স্থানীয়রা বহুবার অভিযোগ করার পরও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।


সূত্রে জানা গেছে, রিংকি বিবি নামে এক মহিলা ঘর ভাড়া নিয়ে এখানে দেহ ব্যবসার আসর বসাত। তার সঙ্গে আরও চারজন দালাল মিলে পুরো ব্যবসাটি চালাত। বাইরে থেকে ক্রেতারা আসত, আর তারা এই অবৈধ কার্যকলাপ পরিচালনা করত। দিনের বেলা এলাকাটি স্বাভাবিক মনে হলেও সন্ধ্যার পর থেকেই পরিবেশ বদলে যেত।


এক গৃহবধূর সঙ্গে অসভ্য আচরণ, তারপরই পুলিশের অভিযান


রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ঘটে যায় এমন এক ঘটনা, যা পুরো চক্রটিকে ফাঁস করে দেয়। স্থানীয় এক গৃহবধূ তার কাজে বেরিয়েছিলেন। তখনই এক ব্যক্তি তাকে কটুক্তি করে। এতে তিনি প্রতিবাদ করেন এবং দু'পক্ষের মধ্যে বচসা বাঁধে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকলে স্থানীয়রা বজবজ থানার পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে এলাকাবাসী জানায়, এখানে দীর্ঘদিন ধরে দেহ ব্যবসা চলছে। বাইরের লোকেরা এসে প্রায়শই স্থানীয় মহিলাদের উত্যক্ত করে।


প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চলছিল অবৈধ ব্যবসা


স্থানীয়দের মতে, একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার শ্যালিকা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ কারণেই প্রশাসন এতদিন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেউই আগে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা দেয়নি। ফলে তারা বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল না। তবে এলাকাবাসী পাল্টা দাবি করেছে, মৌখিক অভিযোগ বহুবার জানানো হলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি।


পুলিশের হস্তক্ষেপে ধরা পড়ল ১৭ জন


রবিবার রাতেই বজবজ থানার পুলিশ মধুচক্রে হানা দেয়। অভিযানে পাঁচজন মহিলা ও ১২ জন পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের তালিকায় অন্যতম নাম রিংকি বিবি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। এ ছাড়া আরও চারজন দালালের নাম উঠে এসেছে, যারা নিয়মিত এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল।


গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘ইমমরাল ট্রাফিক প্রিভেনশন অ্যাক্ট’-এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে তাদের আলিপুর আদালতে পাঠানো হয়। তবে পুলিশের এ হানার পরও স্থানীয় বাসিন্দারা মুখ খুলতে রাজি নন। কেউই প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেন না।


এলাকাবাসীর ক্ষোভ ও আতঙ্ক


যদিও দেহ ব্যবসার আসর বন্ধ করার জন্য পুলিশের ভূমিকাকে অনেকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, তবে অনেকে আশঙ্কা করছেন যে প্রভাবশালীদের চাপের কারণে অভিযুক্তরা আবার ছাড়া পেয়ে যাবে এবং ব্যবসা পুনরায় শুরু হবে। এলাকাবাসীদের দাবি, প্রশাসন যেন কড়া নজরদারি বজায় রাখে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করে।


এদিকে, এই ঘটনার পর স্থানীয় মহিলারা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাদের মতে, বাইরের লোকজনের অবাধ আনাগোনা থাকায় তারা রাস্তায় বেরোতেও ভয় পান। অনেকে বলছেন, দেহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ফেরত এলে আবারও এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে।


প্রশাসনের করণীয়


এই ঘটনার পর প্রশাসনের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে। শুধুমাত্র গ্রেফতার করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, এর পিছনের মূল হোতাদের খুঁজে বের করা জরুরি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এই ব্যবসা চললে তা বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।


পুলিশের উচিত এখন থেকেই নজরদারি বাড়ানো, যেন ভবিষ্যতে আবারও এমন ঘটনা না ঘটে। স্থানীয়দেরও সচেতন হতে হবে এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশকে জানাতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url