স্বামীর কিডনি বিক্রির টাকা নিয়ে পরকীয়ার প্রেমিকের সঙ্গে পালালো স্ত্রী

 

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার সাঁকরাইলে সম্প্রতি ঘটে গেছে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। স্ত্রী স্বামীকে কিডনি বিক্রি করতে উৎসাহিত করেন, আর পরে সেই টাকায় পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান। এমন ঘটনার কথা শুনলে হয়তো কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না, কিন্তু বাস্তবে এমনই এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।


পরিবারের অভাব-অনটনের কারণেই কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত


পিন্টু বেজ নামের ৩৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তি স্ত্রী সুপর্ণা বেজের সঙ্গে ১৬ বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের একটি ১২ বছর বয়সী কন্যাসন্তান রয়েছে। তবে আর্থিক অনটনের কারণে সংসারে নেমে আসে দুঃসময়। কয়েক বছর ধরে নানা সংকটে ভুগছিলেন তারা। অর্থের অভাবে মেয়ের পড়াশোনা এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন পিন্টু।


এমন পরিস্থিতিতে তার স্ত্রী সুপর্ণা তাকে কিডনি বিক্রি করার পরামর্শ দেন। প্রথমদিকে পিন্টু রাজি হননি, কিন্তু স্ত্রীর অনুরোধে এবং সংসারের অভাব দূর করার আশায় শেষমেশ কিডনি বিক্রি করতে রাজি হন। প্রায় এক বছরের প্রচেষ্টার পর তিন মাস আগে একজন ক্রেতার খোঁজ পান তিনি। ১০ লাখ রুপির বিনিময়ে তিনি নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সোয়া ১৪ লাখ টাকা। তার আশা ছিল, এই অর্থ দিয়ে সংসারের অভাব কিছুটা দূর হবে এবং মেয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপদ হবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস!


পরকীয়ার ফাঁদে স্ত্রী, স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা


পিন্টু যখন ভাবছিলেন, সংসারের দিনবদল হবে, ঠিক তখনই ঘটে এক ভয়াবহ ঘটনা। স্ত্রী সুপর্ণা ফেসবুকে এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্বামীর কিডনি বিক্রির টাকার পুরোটা নিয়ে সেই প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যান। স্বামী যখন টাকার খোঁজ করতে থাকেন, তখন ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে আসল সত্য।


হতভাগ্য পিন্টু স্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে জানা যায়, সুপর্ণা তার প্রেমিকের সঙ্গে কলকাতায় আছেন। এ খবর পেয়ে পিন্টু তার শ্বশুর-শাশুড়ি ও মেয়েকে নিয়ে সেখানে হাজির হন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন, স্ত্রী তার সঙ্গে ফিরতে মোটেও আগ্রহী নন। বরং উল্টো স্বামীকে ডিভোর্সের হুমকি দেন এবং বলেন, "যা পারো, করো!"


পুলিশের তদন্ত ও স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া


পিন্টুর করা মামলার ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পুলিশের দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়, সুপর্ণা নিজেই লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছেন এবং এখন প্রেমিকের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকছেন। অর্থাৎ তাকে কেউ জোর করে নিয়ে যায়নি বা কোনো চাপে ফেলেনি।


এদিকে, প্রতারিত স্বামী পিন্টু মানসিক ও আর্থিকভাবে পুরোপুরি বিপর্যস্ত। সংসারের অভাব দূর করতে গিয়ে তিনি নিজের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারালেন, আর বিনিময়ে পেলেন স্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতা। এই ঘটনায় স্থানীয় মানুষজনও বিস্মিত হয়েছেন।


সমাজে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে?


এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে অনেকে পিন্টুর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে সুপর্ণার কাজকে চরম নিন্দা জানিয়েছেন। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।


অনেকে বলছেন, ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততার অভাব থাকলেই এমন ঘটনা ঘটে। সংসারে কষ্ট থাকলেও কেউ কিডনি বিক্রির মতো ঝুঁকি নেওয়া উচিত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আবার অনেকেই বলছেন, সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এমন ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।



পিন্টুর জীবনে যা ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক। স্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতায় তিনি একদিকে যেমন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই ঘটনা শুধু তার একার নয়, বরং সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য একটি শিক্ষা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url