স্যার আমি আস্তে করি, চেষ্টা করি যেন বেশি ব্যথা না পায়!
সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক নাছির উদ্দিনের ভয়ংকর যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তিনি মাদ্রাসার ছাত্রদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে নিজের লালসার শিকার বানাতেন। এতিম ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে বলৎকার করতেন। তার এই নৃশংস অপরাধের তথ্য উঠে আসার পর পুরো দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা গেছে।
এই ঘটনা আমাদের সমাজে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে যেন তাদের সন্তানরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা অন্য কোথাও নির্যাতনের শিকার না হয়।
ঘটনার বিবরণ
রাঙ্গুনিয়ার একটি কওমি মাদ্রাসার হোস্টেল ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন নাছির উদ্দিন (৩৫)। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ১০ বছরের নিচে বয়সী ছেলেশিশুদের বলৎকার করতেন। যদি কেউ তার কথা না শুনত, তবে ভয় দেখিয়ে, মারধর করে বা মানসিক চাপে ফেলে তাকে বাধ্য করতেন।
তার বিকৃত যৌন আসক্তির কারণে স্ত্রীও তাকে ছেড়ে যান। কিন্তু এতদিন এই অপরাধ গোপন থাকলেও একদিন এক অভিভাবকের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এরপর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
পুলিশ নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে এবং আদালতে পাঠায়। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে তিনি তার অপরাধ স্বীকার করেন।
শিশু নির্যাতনের ভয়াবহ দিক
শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা কেবল মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং তাদের পুরো ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেয়।
১. মানসিক আঘাত: এমন ঘটনার শিকার শিশুরা সারাজীবন মানসিক যন্ত্রণা বহন করে। তারা স্বাভাবিকভাবে বড় হতে পারে না, বিষণ্নতা, ভয় ও আত্মবিশ্বাসের সংকটে ভুগতে থাকে।
2. শিক্ষাজীবনে প্রভাব: নির্যাতিত শিশুরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে। তারা বিদ্যালয় বা মাদ্রাসায় যেতে ভয় পায়।
3. সামাজিক প্রতিবন্ধকতা: অনেক ক্ষেত্রেই নির্যাতিত শিশুরা লজ্জা ও ভয় থেকে কারও কাছে বলতে পারে না। এতে অপরাধীরা আরও বেশি সুযোগ পায় এবং একই কৌশলে অন্যদেরও ফাঁদে ফেলে।
অভিভাবকদের করণীয়
এ ধরনের ভয়াবহ ঘটনা থেকে শিশুদের রক্ষা করতে অভিভাবকদের আরও সতর্ক হতে হবে।
সন্তানের প্রতি মনোযোগ দিন: শিশুদের আচরণ পরিবর্তন লক্ষ্য করুন। যদি তারা হঠাৎ করে নিরব হয়ে যায়, ভয় পেতে শুরু করে বা নির্দিষ্ট কাউকে দেখলে অস্বস্তি প্রকাশ করে, তাহলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখুন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাচাই করুন: আপনার সন্তান কোথায় পড়াশোনা করছে, সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন।
শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন: যাতে তারা নির্ভয়ে আপনাকে সব বলতে পারে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিন: কোনো সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান।
সমাজের দায়িত্ব
শুধু অভিভাবক নয়, সমাজকেও সচেতন হতে হবে। এ ধরনের অপরাধীরা যাতে কঠোর শাস্তি পায়, তা নিশ্চিত করা দরকার।